মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ : জিএম কাদের
রহমত নিউজ ডেস্ক 08 May, 2023 10:18 PM
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটি দল খারাপ কিছু শুরু করলে পরবর্তীতে অন্য দল ক্ষমতায় এসে তা আরো বাড়িয়ে দেয়। দোষ-ত্রুটির দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম না। এভাবে দুটি দল দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে একটি বিকল্প শক্তি হতেই বিকল্পধারা সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু তারা বিকল্প শক্তি হতে পারেনি। তাই যারা বিকল্প শক্তি হতে চেয়েছিলো তারা এখন জাতীয় পার্টিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে জাতীয় পার্টি একমাত্র বিকল্প শক্তি। জাতীয় পার্টিই পারবে এই দুটি দলের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে। আর, জাতীয় পার্টি ব্যার্থ হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশকে ধংষ করে দেবে।
আজ (৮ মে) সোমবার বিকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারা সভাপতি আবুল বাসার ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু’র নেতৃত্বে বিকল্পধারা’র শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের সময় নবাগতদের স্বাগত জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি’র সভাপতিত্বে এবং লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন, মাসরুর মওলা, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, মোঃ মাশরেকুল আজম রবি, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের, দফতর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক প্রমুখ।
জিএম কাদের বলেন, আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা দেখতে চাই এবং মানুষকে দেখাতে চাই, সরকার কি করছে - কি করতে চায়। প্রার্থীরা বলছেন সিটি নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতংক শুরু হয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেই যাচ্ছে ইভিএমকে ভয় পাবেন না। দেশের মানুষ কিন্তু বোকা নয়। ইভিএম নিয়ে বর্তমান সরকার কেরিকেচার করেছে। ইভিএম-এ কে-কোথায় ভোট দিলো তার প্রমাণ থাকে না। কে কিভাবে ডিক্লেয়ার করে তার প্রমাণ থাকে না। সাধারণ মানুষ মনে করে, ইভিএম দিয়ে সরকার যাকে খুশী বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে। সাধারণ মানুষ বলেন, ভোট দিতে গেলে সরকারদলীয় লোকজন ভোট দিয়ে দেয়। আমরা ভোট দিলেও সরকারি দল আর না দিলেও সরকারি দলই পাশ করছে। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবাই ইভিএম ব্যবহার করে সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করছে। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাইলে ইভিএম বাদ দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোন সিটি নির্বাচনেই ইভিএম দেয়া ঠিক হবে না। ক্ষমতায় থেকে, প্রশাসন ব্যবহার করে এবং দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা কুক্ষিগত করে নির্বাচনে পাশ করলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন হয় না। এমন নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন জনগণ তাদেরও সম্মান করে না। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধংস করে বিরাজনীতিকরণের দিকে দেশ ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একই সাথে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯১ সালের পর থেকে সংবিধানের ৪টি মূল নীতির একটিও বজায় রাখছে না কেউ। দেশের গণতন্ত্র ধংস করা হয়েছে। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সরকার গঠন করা হবে। দেশে এটি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তাই, কেউ আর জনগণের কথা চিন্তা করে কাজ করে না। বরং জনগণের কথা কিভাবে বন্ধ করা যায়, কিভাবে গণমাধ্যমে গণমানুষের দাবি প্রকাশ না হয় সেজন্য বিভিন্ন আইন করা হচ্ছে। যারা সংবিধানের দোহাই দেন তারা কেউই গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। সংবিধানের মূল নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র আমরা ঘোষণা দিয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। জাতীয়তাবাদ নিয়ে একেক জনের একেক মত। আওয়ামী লীগ বলে বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর বিএনপি বলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। হাস্যকর বিষয় হলো দেশের মানুষ জানে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কী জাতীয়তাবাদ দিয়েছে। বাকি থাকে, ধর্ম নিরপেক্ষতা। এটা মানুষের রক্তের মধ্যে আছে। হাজার বছর দেশের হিন্দু-মুসলিম একই মাঠে উপাসনালয়ে ধর্ম পালন করে তাতে কোন সমস্যা হয় না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতা ধংস করে দিচ্ছে। তারা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে তাদের বাড়ি-ঘর দখল করছে। তদন্ত করলে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই জড়িত। বিএনপির সময়ও সরকারী দলের লোকেরাই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু তারা দোষ দেয়ার সময় দোষ দেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছিলেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার সংবিধান সংশোধন করেছে কিন্তু তারা তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিতে পারেনি। কারণ, রাষ্ট্রধর্ম দেশের ৯০ ভাগ মানুষের অন্তরের চাওয়া ছিলো। ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের সকল অঙ্গ তছনছ করে ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধান-সংবিধান করছে। এর আগে বিএনপিও একই কাজ করেছিলো।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিলো। কারণ, ঐ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে দলীয় লোকজন বসিয়েছিলো বিএনপি। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। একই দাবিতে আওয়ামী লীগও ঐ নির্বাচন বর্জন করেছিলো। ৯৬ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে হবে। ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো আওয়ামী লীগ সহ আমরা আবারো নির্বাচন বর্জন করেছি। ওয়ান ইলেভেনের কারণে বিএনপির নির্বাচনের চেষ্টা শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এখন সেই বিএনপি বলছে, আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের আওতার বাইরে দেখতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। দলীয়করণের মাধ্যমে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ৯১ সালের পর থেকে টেন্ডারবাজী করে এক শ্রেণীর লোক আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ একবার আর বিএনপি দুর্ণীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরশাদ এর দেশ পরিচালনার সময় দেশ কখনোই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। বিএনপি দেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড শুরু করেছে আওয়ামী লীগসহ আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড আরো বেড়েছে। এখন সারা পৃথিবীতে আমাদের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড হচ্ছে লুটপাটের উদ্দেশ্যে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি, এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যারা লুটপাট করেছে তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর বানিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ কী খেয়ে থাকবে। আইএমএফ এর তথ্য মতে মুদ্রাস্থিতি আরো বাড়বে। আগামী দিনে আরো রিজার্ভ কমতে পারে। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোও টাকা পয়সা অপচয় করেনি তাই তারা দেশের মানুষকে সাহায্য করতে পারছে। আমরা মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত এবং নিম্মমধ্যবিত্তদের জন্য রেশন কার্ড দিতে দাবি জানিয়েছি। রেশন কার্ড হচ্ছে না, কারণ সরকারের মানুষকে তো প্রয়োজন নেই। মানুষের ভোটাধিকার যতদিন না থাকবে ততদিন রাজনীতিবিদদের কাছে মানুষের প্রয়োজন নেই। তাই বিকল্প একটি শক্তি প্রয়োজন। জাতীয় পার্টি সেই বিকল্প শক্তি হতে চেষ্টা করছে।